রবীন্দ্র-স্নেহধন্য বিহারীলাল গোস্বামীর প্রতিভাবান পুত্র পরিমল গোস্বামীর ছিল অতুলনীয় স্মৃতির ভাণ্ডার। রসিক মানুষটির স্মরণীয় মন্তব্য, তাঁর জীবনের তিনটি অসাধারণ ঘটনা হল হ্যালির ধূমকেতু, রবীন্দ্রনাথ আর দু’টি বিশ্বযুদ্ধ। জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির নীচের একটি ছোট ঘরে বসবাস করার সময় তিনি দেখেছেন রবীন্দ্রনাথ আপনমনে গান তৈরি করছেন, শুনেছেন সেই সুর। যে জীবনের মধ্য দিয়ে তিনি গিয়েছেন, যাঁদের সান্নিধ্য পেয়েছেন, পত্র-সম্পর্ক হয়েছে যাঁদের সঙ্গে, তা এককথায় জীবনদেবতার আশীর্বাদ। সাহিত্যের নানা শাখায় লব্ধপ্রতিষ্ঠ হলেও আজকের পাঠকের কাছে পরিমল গোস্বামীর স্মৃতিচারণামূলক গ্রন্থগুলি অদ্ভুত অনুভূতি এনে দেয়। কলম আর ক্যামেরা এই দুইয়ের অবলম্বনে তিনি নির্মাণ করেছেন একের পর এক বাঙালি মনীষীর ভাব-প্রতিমূর্তি, যা চিরন্তন ও দুর্লভ। হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রমথ চৌধুরী, রাজশেখর বসু, মোহিতলাল মজুমদার, সজনীকান্ত দাস, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, নজরুল ইসলাম, দাদাঠাকুরের মতো স্বনামধন্য মানুষেরা তার স্মৃতিকথায় উঠে এসেছেন মণিমুক্তোর আলো ছড়িয়ে। সযত্নে রক্ষিত বিপুল পত্রসম্ভার, যার প্রাপক ছিলেন তিনি, তাতেও ধরা আছে স্বপ্নিল এক সময়। ‘পত্রস্মৃতির পাতায় পাতায় শরদিন্দু, বনফুল, নীরদচন্দ্র চৌধুরীর পত্নী অমিয়া, সুধাকান্ত রায়চৌধুরী, হারীকৃষ্ণ দেব, রাজশেখর বসু নিজস্ব অভিব্যক্তি নিয়ে স্বমহিমায় উপস্থিত। ‘স্মৃতিচিত্রণ’, ‘দ্বিতীয় স্মৃতি’, ‘আমি যাঁদের দেখেছি’, ‘পত্রস্মৃতি’, ‘যখন সম্পাদক ছিলাম’-এর মতো অসামান্য গ্রন্থগুলির পাশাপাশি অগ্রন্থিত ‘পুনর্যাত্রা স্মৃতিপথে’ নিয়ে প্রকাশিত হল পরিমল গোস্বামীর ‘সমগ্র স্মৃতিচিত্র’। যেখানে রসবোধ আর কাব্যময়তায় মুখর হয়ে আছে সসম্মান সখ্যতায় ভরা এক সোনালি অতীত।