‘কাউকে কিচ্ছু না ব’লে, মেঘ নেমে আসার মুহূর্তেই / মিলিয়ে যেতে চাই আমি। যদি তোমরা তাকে মরে যাওয়া বলে মানো’। এভাবেই, যেন-বা অতি সাধারণ কয়েকখানা আঁচড়ে, আলগোছে নিজের মৃত্যুর কথা লিখছেন মধ্যচল্লিশে দাঁড়ানো শ্রীজাত। এদের বলা যেতেই পারে মৃত্যু-পরবর্তী কবিতাগুচ্ছ, বলা যেতেই পারে, কবি যেন নিজের মৃত্যুর অব্যবহিত পরের সময়ে কলম ধরছেন আর লিখে রাখছেন নিজেরই চলে যাওয়াকে।
শিল্পের নানা শাখায় মৃত্যুচিন্তা বারেবারে ছাপ রেখে গিয়েছে, শ্রীজাত’র এই কাব্যগ্রন্থও সেই প্রবাহেই সামিল। একের পর এক কবিতায় নিজের মৃত্যুর দিকে নানান দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে তাকিয়েছেন তিনি। ধারাবাহিকভাবে রচনা করে গিয়েছেন নিজেরই প্রয়াণকথা। যেন আড়াল থেকে চোখ রাখছেন তিনি নিজের শোকযাত্রার দিকে আর ছোট ছোট বর্ণনায় ফুটে উঠছে সেই বিচ্ছেদের কাহিনি। ফুটে উঠছে তাঁর জীবৎকাল সমাপ্ত হওয়ার পরের পৃথিবী, যেখানে সবই আছে, কেবল তিনি নিজে ছাড়া। এ এক বিষাদাচ্ছন্ন গ্রন্থ, যার পাতায় পাতায় প্রাণ পেয়েছে মৃত্যু। শ্রীজাত’র ‘শববাহিকা’ পাঠককে যেমন দাঁড় করাবে আদ্যন্ত ভণিতাহীন এক অনুভূতিমালার সামনে, তেমনই উপহার দেবে মলাটবন্দি এক আশ্চর্য মনখারাপ, যেমনটা তাঁর কবিতায় পাওয়া যায়নি এর আগে।