বুনো ঝোপ আর লতার জঙ্গল। পাশে নদী। ধর্মনারায়ণ স্বপ্নাদেশে জানতে পারেন। সেখানেই একটি বেলগাছের নীচে মাটির তলায় শুয়ে আছেন মা। মাটি খুঁড়ে পাওয়াও গেল চার ফুট উচ্চতার বিগ্রহ। দ্রুত মন্দির নির্মাণ করে। বিগ্রহকে প্রতিষ্ঠিত করলেন ধর্মনারায়ণ। এত বছর পরে সেই মন্দিরকে লোকে বলে মায়ের বাড়ি। ধর্মনারায়ণের পৌত্র উদিতনারায়ণের কন্যা বিম্ববতী এবং তার স্বামী মুক্তোনারায়ণ বর্তমানে মন্দিরটিকে ভক্তিভরে দেখাশোনা করেন। মন্দিরের বর্তমান পুরোহিতের সন্তান তারাপদ খ্যাপাটে। স্কুলে না গিয়ে নদীর ধারে বসে মায়ের গান গায়, মেঘ দেখলে নাচে, জ্ঞানগর্ভ কথা বলে সরল ভাষায়। তারাপদর সঙ্গে বিয়ে হয় কামাখ্যাপ্রসাদের কন্যা সরলাবালার। সরলা বাপের বাড়িতে থেকে যায়, কারণ সে নিতান্ত বালিকা। কয়েক বছর পর সদ্যযুবতী সরলাবালা স্বামীর কাছে প্রত্যাখ্যাত হয়ে ফিরে আসে পিতৃগৃহে। তারাপদ মাতৃসাধনায় আত্মহারা। বিম্ববতীর হস্তক্ষেপে এরপর সরলাবালা স্বামীর কাছে ফিরলেও তাদের কোনও দাম্পত্যজীবন হয় না। সাধক স্বামীর কথায় নিজেকে গৃহবন্দি করে রাখে সরলা। তার জীবন সম্পূর্ণ পালটে যায়। তারাপদর ধর্মসাধনায় বিঘ্ন না ঘটিয়ে নিজস্ব জীবন খুঁজে নেয় সরলাবালা। হাজার দীন-দুঃখী গরিব মেয়েদের কাছে সরলাবালা আশ্রয়দাত্রী। মা-জননী। সমরেশ মজুমদারের ‘মানুষের মা’ উপন্যাসে অদ্ভুত এক উত্তরণের কাহিনি। নারীশক্তির জাগরণে একটি গ্রাম্য বালিকা এই আখ্যানে ক্রমে হয়ে ওঠে রক্তমাংসের এক ঈশ্বরী।