এক প্রজন্মের (১৮৯০-১৯১০) ভারতীয় নেতা হিন্দুধর্ম ও দেশীয় ঐতিহ্যের মধ্যে নতুন জাতীয়তাবাদের মূল অনুসন্ধান করতে গিয়ে কী ধরনের বিশ্ব-বীক্ষা ও কর্মকাণ্ডের সূচনা করেছিলেন, এ-গ্রন্থে তার বিশদ বিশ্লেষণ করেছেন প্রখ্যাত ইতিহাস বেত্তা অমলেশ ত্রিপাঠী। বালগঙ্গাধর তিলক, বিপিনচন্দ্র পাল, অরবিন্দ ঘোষ ও লাজপৎ রায় প্রমুখ নেতা ভারতকেন্দ্রিক যে-ভাব মণ্ডলে বিরাজ করতেন তা সৃষ্টি করেছিলেন তিনজন—বঙ্কিম চন্দ্র, বিবেকানন্দ ও দয়ানন্দ। ইংরেজ ভক্তির আতিশয্য ও সহযোগিতার সীমিত সুফল নরমপন্থীদের দাবিকে ঔপনিবেশিক স্বায়ত্তশাসনের বাইরে যেতে দেয়নি। কিন্তু শিল্পসংহার, গণদারিদ্র, সম্পদ-নিষ্কাশন, জাতিবৈর ও আমলাতান্ত্রিক ঔদ্ধত্য নতুন প্রজন্মকে প্রণোদিত করে জাতীয়তাবাদের উগ্রতর আদর্শ-সন্ধানে। আর্য জীবনচর্যার পৌরুষ, ধর্মরাজ্য স্থাপনের জন্য শ্রীকৃষ্ণের ধর্মযুদ্ধ, স্বরাজ্য প্রতিষ্ঠায় শিবাজীর বিস্ময়কর সাফল্য, বঙ্কিমের অমর মাতৃমন্ত্র, বিবেকানন্দের অভয় আত্মবলিদানের আহ্বান—সবমিলে তৈরি হয় চরমপন্থীর অগ্নিগর্ভ মানসিক জগৎ। তাতে ইন্ধন যোগাল আবেদন-নিবেদনের ব্যর্থতা, তাকে দাবানলে রূপান্তরিত করল কার্জনের বঙ্গভঙ্গ। চরমপন্থার প্রতিক্রিয়া নিষ্ক্রিয় প্রতিরোধে শুরু আর শেষ সন্ত্রাসবাদে। ইংরেজ তার জবাব দিল মুসলিম স্বাতন্ত্রবাদকে উস্কানি দিয়ে, সাংবিধানিক সংস্কারের দ্বারা নরমপন্থীদের হাত করে এবং চরমপন্থীদের উপর কঠোর দমন নীতি প্রয়োগ করে। তাঁর প্রতি পাদ্যের সমর্থনে অমলেশ ত্রিপাঠী সাহিত্য, অর্থনীতি, সমাজতত্ত্ব, ধর্ম প্রমুখ নানা ক্ষেত্র থেকে উপাদান আহরণ করেছেন। অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট বোঝাবার জন্য ব্যবহার করেছেন সংখ্যাতত্ত্ব। দেখিয়েছেন যে, আপাত দৃষ্টিতে ব্যর্থ হলেও চরমপন্থা গান্ধীবাদী ও গান্ধী বিরোধী উভয় ধারার রাজনীতিকে প্রভাবিত করেছিল। অসহযোগ প্রেরণা পায় স্বদেশী আন্দোলন থেকে; বিপ্লব বাদের উৎস সন্ত্রাসবাদ; বিদেশী শোষণের প্রতিবাদ সাম্যবাদী ঐতিহ্যের অঙ্গ। দেখিয়েছেন, বঙ্কিমচন্দ্র, বিবেকানন্দ ও রবীন্দ্রনাথের চিন্তাধারার ও চরমপন্থী চিন্তাধারার মধ্যে কোথায় মিল আর কোথায় অমিল। রুশ স্লাভোফিল, জার্মান রোমান্টিক ও কেল্টিক আন্দোলনের সঙ্গে তুলনামূলক আলোচনা টেনে তাঁর বিশ্লেষণে গভীরতা ও ব্যাপকতা এনেছেন এই মননশীল আলোচক।