দশ বছর বয়স থেকে শিকারে যাচ্ছেন বুদ্ধদেব গুহ। বাংলা সাহিত্যে তাঁর আত্মপ্রকাশ জঙ্গলমহল-এর গল্প শুনিয়েই। অরণ্য তাঁর বহু জনপ্রিয় গল্প-উপন্যাসের প্রধান পটভূমি। তবে, অলঙ্কার-নির্মাণের স্বার্থে যেমন খাঁটি সোনাতেও মেশাতে হয় খাদ, তেমনই সে-সব রচনাতে স্বাভাবিকভাবেই যুক্ত হয়েছে কিছু-কিছু কল্পনা। এই প্রথম এমন-এক রচনা উপহার দিলেন বুদ্ধদেব গুহ, যা সম্পূর্ণ নিখাদ।এ-রচনাও অরণ্যকেন্দ্রিক, তবু প্রতিটি পটভূমি অবিকল, প্রতিটি চরিত্র বাস্তব।আসাম-বাংলা-বিহার-ওড়িশার বিস্তীর্ণ যে-বনাঞ্চল ফিরে-ফিরে এসেছে তাঁর নানান সৃষ্টিতে, সেইসব অঞ্চল কীভাবে জড়ানো তাঁর শিকারী-জীবনের অনুষঙ্গে, এ-গ্রন্থের খণ্ডে-খণ্ডে সে-কথাই শুনিয়ে চলেছেন বুদ্ধদেব গুহ।এই দ্বিতীয় খণ্ডে তিনি শুনিয়েছেন ওড়িশার বনে-জঙ্গলে ঘুরে বেড়ানোর অপরূপ স্মৃতি-অভিজ্ঞতার কথা। ১৯৫৯ থেকে ১৯৭২— এই পনেরো বছরে নিয়মিত তিনি ছুটে গেছেন ওড়িশায়। কখনও এক বছরেই দু-তিনবার। এই খণ্ডে সেই সমূহ স্মৃতিকে ফিরিয়ে এনেছেন বুদ্ধদেব গুহ। শুনিয়েছেন টুল্বকার ভীমধারা আর পুরুনাকোটের পথের কথা, বিরিগড়ের চন্দনী আর ফুলবনীর ফুলমণির কথা, লবঙ্গীর গেণ্ডুলিবনের পূর্ণিমার চাঁদ আর বাঘমুণ্ডার হাতিগিজা পাহাড়ের কথা। এই পটভূমিকায় গড়ে-ওঠা তাঁর অজস্র গল্প-উপন্যাসের কথাও।শিকারজীবনের স্মৃতিকথা, তবু শিকার যেন উপলক্ষ এই বইতে। লক্ষ্য: প্রকৃতির অন্দরমহলের কিছু আশ্চর্য মানুষের দুর্লভ সাহচর্যের ‘মনমৌজী জবান’-এ বর্ণনা। সেই বর্ণনার গুণেই এ-রচনা আদ্যন্ত সরস ও উপভোগ্য।