মাশুক চৌধুরী সচেতনভাবে নয়, এক সহজাত আত্মতাড়না থেকে স্বাধীন জন্মভূমিতে আবির্ভূত নতুন সময়ের কবিদের সংগে কণ্ঠ মেলান। স্বাধীন বাংলাদেশে কবিতায় বিমগ্ন প্রথমগুচ্ছ কবিদের একজন তিনি। সত্তর দশকের কয়েক বছরের মধ্যে তিনি হয়ে উঠলেন মাশুকুর রহমান চৌধুরী’ থেকে মাশুক চৌধুরী। লিরিকের আবহে নিমজ্জিত। শুধু হঠাৎ-হঠাৎ বাস্তবের রূঢ় চেহারা দেখে বেদনার্ত হন। মাশুকের কবিতায় আমরা এক ব্যতিক্রমী সতেজতা আবিষ্কার করি, তার উচ্চারণে শুনতে পাই। আত্মদহনে দগ্ধ ও বিদীন এবং বস্তুজগতের অজস্র পলায়ণপরতা এবং শাঠ্যে বিমূঢ় এক কবির ক্রন্দন। এই রক্তক্ষরা ক্রন্দনে লুকিয়ে থাকে দার্শনিক সুলভ এবং নিরাসক্ত পর্যবেক্ষনজাত উক্তি, যা মাশুকের অনেক রচনাকে উজ্জ্বল করে রাখে। মনােজগৎকে ক্রমাগত আবিষ্কার করা এবং এর অচেনা অলিগলির অভিজ্ঞতা আহরণ মাশুকের কবিতাকে বিশিষ্ট করেছে। সরাসরি রাজনীতি সচেতন না বললেও রাজনীতির মৌলিক গতি প্রকৃতির প্রতি মাশুক চৌধুরীর আগ্রহকে লক্ষ্য করি আমরা বিশেষভাবে সত্তর দশকের আরাে কোন কোন কবির মতাে। তিনিও মার্কসবাদের মন্ত্রে নিজেকে উজ্জীবিত রাখেন, ফলে মানুষের সার্বিক কল্যাণ তার আরাধ্য হয়ে উঠে। একজন খাঁটি মানবপ্রেমিক কবির মতাে মাশুকও তার ব্যক্তিগত আবহপ্রধান কবিতাকে। সামষ্টিক আবেগ এবং অনুভূতিতে জাড়িত করেছেন। তার চোখে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ হয়ে উঠে এক আন্তর্জাতিক এবং সার্বজনীন মুক্তিযুদ্ধ।