বাংলা গোয়েন্দা সাহিত্যের কালানুক্রম অনুসরণে এই সংকলনে স্থান পেয়েছে ১৯০৭ থেকে ১৯৩৮ সালের মধ্যে প্রকাশিত গোয়েন্দা কাহিনি। আলোচ্য পর্বে গোয়েন্দা সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন— একজন লেখকের একক কাহিনি প্রকাশের বদলে সিরিজ ভাবনার সূত্রপাত। বিভিন্ন লেখক কিংবা সম্পাদকের নামে প্রকাশিত সিরিজের গোয়েন্দা কখনও এক আবার কখনও ভিন্ন। দীর্ঘমেয়াদে সিরিজের প্রকাশ ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তারই ইঙ্গিতবাহী। প্রথম যুগের গোয়েন্দা কাহিনি সম্পর্কে শিক্ষিত মধ্যবিত্তের একাংশের উন্নাসিকতা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্রমশ কিছুটা স্তিমিত বলে মনে হয়। গোয়েন্দা কাহিনিতে সমকালীন সমাজ ভাবনা বা রাজনীতি চেতনার সচেতন প্রয়োগ, এই পর্বের আরও একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। ষড়যন্ত্র কিংবা অপরাধের প্লটে অনায়াসে জায়গা করে নেয় বিধবা বিবাহের পক্ষে অথবা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনুকূলে সওয়াল। গোয়েন্দা কাহিনি প্রকাশ করে ব্যাবসা কেমন হত সেই বিষয়েও একটা ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। এক-একটা সিরিজের চমকে ওঠার মতো মুদ্রণ সংখ্যা দেখে আন্দাজ করা যায় প্রকাশকদের গোয়েন্দা কাহিনি বিষয়ে আগ্রহের কারণ। কিন্তু আদত লেখকরা সেই সাফল্যের কতটা ভাগ পেতেন সে সন্দেহ থেকেই যায়!
বাংলা গোয়েন্দা কাহিনি সম্পর্কে যে-অভিযোগটি প্রায়শই শোনা যায় যে, কাহিনির অধিকাংশই মৌলিক নয়, অধিকাংশ অনূদিত। সেকথা অস্বীকার না করেও বোঝার চেষ্টা করা হয়েছে কেন সাহিত্যের এই ধারাটিকে এমন একটা পথ বেছে নিতে হয়েছিল। কালের নিয়মে নিশ্চিহ্ন হতে বসা এইসব সিরিজ ও কাহিনির পুনর্মুদ্রণে পাঠক অবশ্যই খুঁজে পাবেন ধারাবাহিকতার একটি সূত্র।