একদিকে পরমেশ্বর, অন্যদিকে প্রতিমা, মধ্যবিন্দুতে বঙ্কিম। সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের লেখায় এই তিন চরিত্র বারবার এসেছে। প্রবল প্রতাপান্বিত শ্বশুর পরমেশ্বরের সঙ্গে সমান দাপটে টক্কর-দেওয়া পুত্রবধূ প্রতিমা, কেরানী স্বামী বঙ্কিমের সঙ্গে পেয়ালাপিরিচের মতো নিত্য আওয়াজে লিপ্ত কর্নেলের মেয়ে, বঙ্কিমগৃহিণী প্রতিমা- এতকাল ধরে নানা পরিবেশে, নানা পরিস্থিতিতে ফুরফুরে হাসির মুচমুচে উপকরণ হয়ে কেবলই দেখা দিয়েছে। সেই চিরচেনা চরিত্র তিনটিই ‘সাধের ময়না’ উপন্যাসের প্রধান তিন চরিত্র। কিন্তু একেবারে ভিন্ন আবহে, অন্য সুরে লেখা এই কাহিনী। সে সুর বিচ্ছেদের, মৃত্যুর, বিরহের। প্রথমে গেলেন পরমেশ্বর, এরপর প্রতিমা। বিমূঢ় বঙ্কিমের হাত ছাড়িয়ে, একেবারে একা, ফাঁকা করে দিয়ে। কীভাবে, তারই অনুপুঙ্খময় বর্ণনা এই উপন্যাসে। দাদাঠাকুর বলেছিলেন, বিদূষক যখন কাঁদে, স্বয়ং ঈশ্বর তাঁর সঙ্গে কাঁদেন। সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের এই চোখের জলে কলম-ডুবিয়ে-লেখা উপন্যাস যেন তারই করুণরঙীন এক উদাহরণ। অমোঘ অশ্রুসঞ্চারী।