আমাদের ইতিহাসের নানা পর্বের ঘটনা, জীবনস্মৃতি এবং সমকালকে ধারণ করেই গ্রন্থের রচনাসমূহ। অপ্রত্যক্ষ বিষয়ও ব্যক্তিগত চিন্তা-চেতনায় মূর্ত হয়েছে গ্রন্থের রচনায়। আমাদের ক্রান্তিকালের শুরু কবে থেকে? তার সঠিক সময়-কাল বলা অসম্ভব। শত-সহস্র বছরব্যাপী। আমাদের ভূখণ্ডের ইতিহাসে নানা পর্বের উত্থান-পতনে, ত্যাগ-আত্মত্যাগেও আমাদের ক্রান্তিকালের অবসান ঘটেনি, এটা নির্মম সত্য। আমরা অনাদিকাল একই বৃত্তে আটকে আছি। আমাদের সমষ্টিগত জীবনে কোনো শুভ পরিবর্তন সূচিত হলো না। পরিবর্তন কেন ঘটেনি? সেটা অগুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন নিশ্চয় নয়। নির্দিষ্টভাবে বলা যায় আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজের পরিবর্তন না ঘটা। অর্থাৎ সমাজ বিপ্লব সংঘটিত না হওয়া। হাত-বদল ঘটেছে কেবলই ক্ষমতার। শাসক বদলের ধারাবাহিকতায় স্বজাতি শাসকেরা ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু শাসকদের চরিত্রের বদল ঘটেনি। রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতা সংখ্যালঘু শাসকশ্রেণির করতলগত। সংখ্যালঘু শাসকদের নিয়ন্ত্রণাধীনে রাষ্ট্রের সকল সামরিক-বেসামরিক প্রতিষ্ঠানের নিরঙ্কুশ অবস্থান ও আনুগত্যে শাসকেরা শক্তিতে-দৌরাত্ম্যে অপ্রতিরোধ্য। রাষ্ট্র ভেঙে নতুন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ধারাবাহিকতায় রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে ব্যবস্থার পরিবর্তন তো পরের কথা, শক্ত-পোক্ত ভাবেই সাবেকী ব্যবস্থা অটুট থেকেছে। সে কারণে রাষ্ট্রের আমলাতান্ত্রিক এবং গণবিরোধী দৃষ্টিভঙ্গি অতীত অবস্থায় বিরাজমান। রাষ্ট্রের প্রতিপক্ষ রাষ্ট্রেরই সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ। রাষ্ট্রের সকল অনাচারের মাসুল গুনছে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ। রাষ্ট্রের ছড়ি হাতে শোষণ, নিপীড়ন, লুণ্ঠনে মত্ত শাসকেরা। আমাদের শাসকশ্রেণি লুণ্ঠনে এবং লুণ্ঠিত অর্থ-সম্পদ বিদেশে পাচারে সিদ্ধহস্ত। সাম্রাজ্যবাদী শোষণ-লুণ্ঠনে প্রতিভূরূপে দেশের সম্পদ-স্বার্থ তুলে দিতেও কার্পণ্য করে না। দেশপ্রেম বলে তাদের কিছু আছে; তেমনটি অনুমান করাও যাবে না। আমরা নিশ্চয় বিদ্যমান এই অপব্যবস্থা থেকে পরিত্রাণ চাই। সেটা সম্ভব হবে সমষ্টিগত মানুষের ঐক্য-সংহতিতে। সামষ্টিক ঐক্যেই সম্ভব প্রতিপক্ষকে পরাভূত করা। এবং সকল মানুষের অধিকার ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করা। তাই সমষ্টিগত মানুষের ঐক্যের বিকল্প কিছু নেই।