কথকতার আদলে লেখা এই সরস ও ব্যতিক্রমী গ্রন্থের বৈশিষ্ট্য শুধু বিস্মৃতপ্রায় এক অধ্যায়ের উপর আলোকপাতেই সীমাবদ্ধ নয়। সে-আলো ছড়িয়ে পড়েছে বিষয় থেকে বিষয়ান্তরে, যা ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে যায় না, বরং অক্লান্ত সন্ধানের চিরন্তন পথকে উদ্ভাসিত করে। সেই উনিশশো ঊনষাট সালে, ‘দেশ’ পত্রিকায় ধারাবাহিক প্রকাশের সময়ে ‘সবুজপাতার ডাক’ সর্বস্তরের পাঠকের অক্ষুণ্ণ অভিনিবেশ আদায় করে নিয়েছিল। হারীতকৃষ্ণ দেবের এই রচনা আসলে এক বহুকৌণিক সম্ভাষণ, যার আবেদন রসিক, বুদ্ধিমান, জ্ঞানপিপাসু, জীবন সম্বন্ধে অনুসন্ধিৎসু পাঠকের কাছে অপ্রতিরোধ্য। সাহিত্যের বিভিন্ন শাখার নির্দিষ্ট সংজ্ঞার কোনও একটি পরিচয়ে এই বইকে চিহ্নিত করা কঠিন। মূলত স্মৃতিচারণ নির্ভর হলেও গ্রন্থটিতে স্থান পেয়েছে অজস্র প্রসঙ্গ—আমাদের ঐতিহ্য-সংস্কৃতি, প্রাচীন ইতিহাস, মুদ্রা, লিপি, শাস্ত্রীয় ধ্যানধারণা, শিল্পকলা, সংগীত, সাহিত্য, আধুনিক জীবনবোধ এবং সর্বোপরি মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক—যা দেশকালের সীমা অনায়াসে লঙ্ঘন করেছে সত্যান্বেষণের আকুতিতে। লেখকের অসাধারণ রসবোধ এবং ভাষার নিপুণ প্রয়োগে জটিল ও দুরূহ বিষয়ের সহজ উপস্থাপনা দীর্ঘ ছত্রিশ বছর পরেও সমান সজীব।