এই সময়ের জীবনযাত্রা প্রণালীর অন্যতম কথক বিপুল দাস। বিপুলের গল্প আসলে এক অ-কথিত অঞ্চলের মানবীয় ব্যাখ্যান। বিপুল সেতার বাদনে দক্ষ। সেই ধ্রুপদী আলাপ ও বিস্তার তার আখ্যানের প্রতিটি পরতে পরিষ্কার ফুটে ওঠে। মৃদু গাম্ভীর্যের আড়ালে বুদ্ধিদীপ্ত রসবোধ তার বিশেষ অভিজ্ঞান। মূলত আখ্যান রচয়িতা বিপুল অপার রসবোধ ও গভীর মমত্বে পলকে তুলে আনেন উত্তর-পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতির দ্বন্দ্ব, নাগরিক সংকট, গ্রাম ও মফস্সলীয় জীবনচর্যা, ব্যক্তি ও বৃত্তির ওতপ্রোত সংঘাত ও সমন্বয়। এইসব আখ্যানে মুহূর্তে একজন বিমা-এজেন্টের মনে হয় প্রাচীন চাঁদের বিমা থাকা বা না থাকার কথা। বন্ধ ও বিক্রি হয়ে যাওয়া বাগানের সার সংকট উঠে আসে চা-গাছের ওলটানো গুঁড়ির টেবিল-সম দানবীয় রূপান্তরে। পেশাগত ভাবে বিজ্ঞানশিক্ষক এই লেখক তাঁর বিজ্ঞানমনস্কতা উজাড় করে ঢেলে দেন এ হেন আখ্যানের নিভৃত চলনে। বিজ্ঞানপ্রসঙ্গ শুধুমাত্র তাঁর গল্পের আংশিক কৌশলমাত্র নয়, আঙ্গিক প্রকরণেও নির্ভার নির্মেদ গদ্য লেখা এক স্বাভাবিক বৈজ্ঞানিক মননের পরিচয় সর্বদা বহন করে। যুক্তিবোধের বহুরৈখিক প্রকাশ পাঠশেষে তাঁর গল্পে আনে বহুমাত্রিক বিন্যাস, অন্বিত করে এক সহজ সাবলীল বহুস্বরীয় ভাষ্য। প্রাক-উপনিবেশ পাঁচালি আখ্যানের সহজিয়া শৈলীর উত্তরাধিকার বহন করেন তিনি। বিস্তীর্ণ সময় বিধৃত থাকে তাঁর গদ্যের মুক্ত উপসংহার সমাবেশে।