পিছিয়ে পড়া মুর্শিদাবাদ জেলার এক প্রত্যন্ত অঞ্চল হিজল জুড়ে মূলত দরিদ্র মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষের বাস। বিগত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকে এক দরিদ্র মুসলমান পরিবারে নবম এবং শেষ সন্তান ফাইনাল ওরফে খোকন গাজির জন্ম এই অঞ্চলের নতুন গ্রামে। অনেকগুলি সন্তানের মধ্যে পরিবারের অবহেলা সত্ত্বেও খোকন তার দাদির হৃদয়ে জায়গা করে নেয় আর দাদিও তার অবহেলিত শেষ জীবনে খোকনকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে থাকে। নানান কুসংস্কার আর অশিক্ষার অন্ধকারে ডুবে থাকা নতুনগ্রামে জেগে থাকে নরনারীর প্রেম ভালবাসা এমনকী পরকীয়াও। দাদির আকস্মিক মৃত্যুতে খোকন আর একবার অবহেলার পাত্র হয়ে ওঠে, গ্রামের মানুষের ফাই ফরমাশ খেটে বড় হতে থাকে খোকন।
পরকীয়ায় মত্ত এক নারীর তালাক হয় গ্রামের বিচারে আর তার বিয়ে হয় খোকনের সঙ্গে। ফুল কুড়াতে গিয়ে হারিয়ে যায় সেই নারী। অন্য এক তালাকপ্রাপ্ত মহিলার দ্বিতীয় বিয়ে ভেস্তে যায় বিয়ের দিন তার চারদিনের প্রথম বিয়ের খরচ চাউর হতেই। মুরুব্বিরা নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে যাওয়া অনিচ্ছুক খোকনের সঙ্গে বিয়ে দেয় রাবেয়ার।
সংসার আলো করে আসে খোকনের দুই সন্তান- ইউসুফ আর রূকসাহানা। নিজের পড়াশুনা হয়নি বলেই খোকন বিশেষ যত্নশীল হয় সন্তানদের পড়াশুনায়। অসাধারণ মেধার দুই সন্তান স্কুলের গণ্ডি ছাড়িয়ে কলেজে আসে আর প্রাকৃতিক নিয়মেই প্রেমে পড়ে ভিন্ন সম্প্রদায়ের নর-নারীর সঙ্গে, যেখানে ধর্মীয় পরিচয় হয়ে যায় গৌণ।
এর মধ্যেই গ্রামে ছড়াতে থাকে রাজনীতির বিষ, চরম দ্বন্দ্বের মাঝে নির্বিবাদী খোকন হয়ে যায় হিজল অঞ্চলের প্রধান। সন্দেহের বশে বিরোধী পক্ষের খুন হয়ে যায় দু’জন, তাতে নাম জড়িয়ে যায় খোকন আর তার ছেলে ইউসুফের। খোকন হারিয়ে যায় একদিন আর ইউসুফকে পুলিশ গ্রেফতার করে। বিগত ষাট-বাষট্টি বছরের পশ্চিমবাংলার গ্রামীণ মুসলমান সমাজের প্রতিচ্ছবি এই উপন্যাসের মাধ্যমে ধরতে চেয়েছেন লেখক।