খুশবন্ত সিং-এর ‘ট্রেন টু পাকিস্তান' ভারত বিভাগের ওপর রচিত কালজয়ী একটি উপন্যাস। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৫৬ সালে। ধর্মীয় ও রাজনৈতিক মতপার্থক্যের কারণে একটি দেশ। বিভাজনের ফলে উদ্ভূতকরুণ ও ভয়াবহ ঘটনাবলীকে একটি উপন্যাসে বাস্তব রূপ দেয়ার দক্ষতা দেখাতে পারেন খুব কম লেখক। ট্রেন টু পাকিস্তান পাঠককে নিয়ে যায় কাহিনির উৎসস্থল পাঞ্জাবের মানাে মাজরা গ্রামে এবং প্রতিটি চরিত্রকে পরিচিত মনে হয়। যেন ঘটনাগুলাে ১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসের নয়, সদ্য ঘটে গেছে। একটি উপন্যাসই প্রমাণ করার জন্য যথেষ্ট যে, একটি দেশ হিন্দু ভারত ও মুসলিম পাকিস্তানে বিভক্ত হওয়ার পরিণতি কত বিপর্যয়কর হতে পারে। ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিত্তিতে কিভাবে পুরাে পরিবারকে শেকড় উপড়ে ফেলে অজানা গন্তব্যে চলে যেতে হচ্ছে সহিংসতা এড়িয়ে তাদের জীবনের নিরাপত্তার আশায়। কিন্তু সেই আশা পূরণ হওয়ার আগেই তারা উন্মত্ত সহিংসতার শিকার হচ্ছে। যেন এটাই দেশ বিভাগের অনিবার্যতা। 'ট্রেন টু পাকিস্তান’ এ মুসলিম কিশােরী নূরানের শিখ প্রেমিক জুগগত সিং নিজের জীবন দিয়ে তার প্রেমিকাসহ মুসলিম শরণার্থীদের বহনকারী একটি ট্রেনকে নিরাপদে পাকিস্তানের উদ্দেশে পাঠানাে নিশ্চিত করতে পারলেও সদ্য সৃষ্ট দুটি দেশের ভিন্ন ধর্মের মানুষের স্থানান্তর প্রক্রিয়া যুগযুগ ধরে শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থানকারী মানুষগুলােকে সহসা উন্মাদ ও রক্ত পিপাসু করে তােলে। প্রায় এক কোটি মানুষকে তাদের জন্মভূমি ছেড়ে অচেনা নতুন স্থানে চলে যাওয়ার এ ঘটনাকে বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অভিবাসন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং এই গণ স্থানান্তরের পর্যায়ে সহিংসতায় নিহত হয়েছে আনুমানিক দশ লাখ মানুষ। ধর্মীয় বিশ্বাসের এই সংকটক্ষণেও খুশবন্ত সিং প্রেমের অমরত্বকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তার সৃষ্টিতে, যেখানে হত্যা, ধ্বংস, উন্মাদনা সত্ত্বেও মানুষ বিপরীত পথ অবলম্বন করে প্রেমের মূল্য দিতে পারে আত্মােৎসর্গ করে।