কল্যাণমূলক অর্থনীতির ভিত্তিগত সমস্যাগুলির গবেষণায় অমর্ত্য সেনের অবদান বিপুল। অর্থনীতি ও দর্শনশাস্ত্র থেকে উপাদান নিয়ে মুখ্য অর্থনৈতিক সমস্যাগুলির আলোচনায় তিনি যোগ করেন নৈতিকতার মাত্রা।উন্নয়ন ও স্ব-ক্ষমতা-তে অষ্টাদশ শতাব্দীর কবি উইলিয়াম কাউপারকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, হাজার গুণ ভর-ভরন্ত স্বাধীনতা দাসত্বে যে তৃপ্ত থাকে জানবে কী তা? অধ্যাপক সেন ব্যাখ্যা করেন কীভাবে সামগ্রিক প্রাচুর্যের বৃদ্ধি সম্পন্ন পৃথিবীতে, কোটি কোটি মানুষ এখনও অ-স্বাধীনতার শিকার। দারিদ্র্য, সামাজিক বঞ্চনা, রাজনৈতিক নিপীড়ন বা সাংস্কৃতিক স্বৈরতন্ত্র ইত্যাদি নানা বন্ধনে বাঁধা। উন্নয়নের প্রধান উদ্দেশ্যই হচ্ছে স্ব-ক্ষমতা ও তার গুণাবলীকে অ-স্বাধীনদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া। স্ব-ক্ষমতা হচ্ছে সামাজিক কল্যাণের সবচেয়ে কার্যকর উপায়। বাজার, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, আইনসভা, বিচারব্যবস্থা ও সংবাদমাধ্যম, প্রভৃতি সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলি ব্যক্তি স্বাধীনতার প্রসার ঘটিয়ে উন্নয়নে নিজস্ব অবদান রাখে, আবার সামাজিক মূল্যবোধগুলির দ্বারা নিজেদেরকেও বাঁচিয়ে রাখে।মূল্যবোধ, প্রতিষ্ঠান, উন্নয়ন ও স্বাধীনতার পারস্পরিক সংযোগকে তিনি অত্যন্ত সুচারুভাবে একটি বিশ্লেষণী পটে তুলে ধরেন।আমাদের যৌথ অর্থনৈতিক সম্পদ এবং আমাদের ইচ্ছামতো বেঁচে থাকার ক্ষমতার মধ্যে সম্বন্ধের প্রশ্নটি তুলে ও ব্যক্তিস্বাধীনতাকে একটি সামাজিক দায়বদ্ধতা হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করে তিনি অর্থনীতিকে পৌঁছে দেন ব্যক্তির মঙ্গল ও স্ব-ক্ষমতার সামাজিক ভিত্তির আলোচনায়।পৃথিবীর পঁচিশটিরও বেশি ভাষায় অনূদিত এই গ্রন্থে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সামাজিক ন্যায় ও মানবাধিকার সংক্রান্ত তাঁর সাম্প্রতিক চিন্তাগুলি চমৎকার ভাবে গ্রথিত।এই গ্রন্থের অনুবাদক অরবিন্দ রায় বিশিষ্ট শিল্প-পরিচালক এবং ‘দি ইন্ডিয়ান ম্যানেজার ইন সার্চ অফ এ স্টাইল’, ‘দি ম্যানেজার বিয়ন্ড দি অরগ্যানিজেশন’, ‘সরো ইজ নলেজ’(উপন্যাস) ইত্যাদি গ্রন্থের লেখক।