বহু বছর আগে, তখন আমি সদ্য তরুণ, এক অজ পাড়াগাঁয়ে আমার পিতার বন্ধুগৃহে একটি বইয়ের সন্ধান পেয়েছিলাম। বইটির নাম ‘টেলস ফ্রম শেক্সপীয়র'; লেখক চার্লস ল্যাম্ব, ইংরেজি প্রবন্ধ-সাহিত্যে যার অবদান অবিস্মরণীয়। তিনি তার অনুপম ভাষায় শেক্সপীয়রের নাটকগুলােকে গল্পাকারে উপহার দিয়েছেন পাঠকদের। টেলস্ ফ্রম শেক্সপীয়র, আজো মনে পড়ে, সেই গ্রামে, নাম যার বেলাবাে, আমার অলস দুপুরগুলােকে মনােরম করে তুলেছিল। সেই কামড়ে-ধরা বই আমাকে নিয়ে গেলাে শেক্সপীয়রের কাছে। চার্লস ল্যাম্বের হাত ধরে আমার পরিচয় হলাে কীং লীয়ার, ম্যাকবেথ, ওথেলাে, প্রস্পেরাে, মিরান্ডার এবং হ্যামলেটের সঙ্গে। শেক্সপীয়র সৃষ্ট এই চরিত্রগুলাের সঙ্গে যে ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠল আমার তা কোনােদিন ফিকে হবে না।
তারপর শেক্সপীয়রের কাব্যনাটক হ্যামলেট’ যতবার পড়েছি ততবারই নিজেকে সমৃদ্ধ মনে হয়েছে; মনে হয়েছে আমি প্রজ্ঞার বলয়ে প্রবেশ করছি বার বার। হ্যামলেট’ পাঠকালে আমি এই নাটকটি অনুবাদের ইচ্ছা প্রকাশ করি নিজেরই কাছে। সেই ইচ্ছা মনে লালন করেছি বহুদিন ধরে। হ্যামলেট' নাটকটির প্রতি আমার দুর্মর অনুরাগই এই অনুবাদ কর্মের উৎস। জানতাম, দুরূহ এই কাজ, প্রায় অসম্ভব। অনুবাদ কর্মের বিভিন্ন পর্যায়ে হতাশায় চুল ছিড়েছি, মাঝপথে এসে বহুবার ভেবেছি, আর পারা গেল না; এবার হাল ছেড়ে দেয়াই ভালাে। কিন্তু এক ধরনের জেদ ঘাড় ধরে আমাকে দিয়ে শেষ পর্যন্ত কাজটি করিয়ে নিলাে। এই অনুবাদকর্ম কী রকম হলাে তার বিচারের ভার স্বাভাবিকভাবেই পাঠকদের উপর।