পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায় তার এই অনূদিত গ্রন্থের ‘পরিশিষ্টের বক্তব্য’ অংশে বলেছেন, ‘আইন-ই-আকবরী আকবরনামা পুস্তকের পরিশিষ্ট মাত্র।
আমরা জানি এই দুই গ্রন্থের রচয়িতাই আবুল ফজল। আমাদের জানা আছে সম্রাট আকবরের নবরত্ন’র কথা। এই নবরত্ন’র একজন, সম্রাট আকবরের মুখ্য সচিব এবং আরও নানা কারণে বিশিষ্ট, আবুল ফজল। আবুল ফজলের অন্যান্য গ্রন্থের মধ্যে আছে ‘ইয়ার-ই-দানিশ। মনে হতে পারে, তিনি শুধু লেখালেখি ও সচিবের ভূমিকা পালনের কারণেই খ্যাতিমান। আমাদের মনে রাখতে হবে এই দুই যােগ্যতার পাশাপাশি তিনি ছিলেন দক্ষ রাজনীতিবিদ ও সেনাপতিও।
‘আকবরনামা’র পরিশিষ্ট বা তৃতীয় খণ্ড হিসাবে বিবেচিত হলেও চরিত্র বা বৈশিষ্ট্যের দিক দিয়ে এ গ্রন্থ দুটো একেবারেই আলাদা। এ সম্পর্কে বলার আগে আবুল ফজল সম্পর্কে আরও কিছুটা বলা প্রয়ােজন। আগ্রার এক জ্ঞানী ও বিদ্বান পরিবারে ১৫৫১ সালের ১৪ বা ১৫ জানুয়ারি আবুল ফজলের জন্ম। পিতা শেখ মুবারক ছিলেন সে সময়ের পণ্ডিত ব্যক্তিদের একজন। শেখ মুবারকের বেশ কয়েক সন্তানের মধ্যে ইতিহাস মনে রেখেছে দুজনকে, কনিষ্ঠতম আবুল ফজল এবং জ্যেষ্ঠ সন্তান শেখ আবুল ফৈজকে। ফৈজ ছিলেন সম্রাটের দরবারে রাজকবি। এবং তাঁর হাত ধরেই ১৫৭৪ সালে আবুল ফজলের সম্রাটের দরবারে প্রবেশ। ঐ সময়ে যার বয়স ২৩, সেই যুবক আবুল ফজলকে এর পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
সম্রাটের প্রিয়পাত্র, মন্ত্রদাতা এবং বিশ্বস্ত যখন, তার শত্রুর সংখ্যাও নিতান্তই কম হবে না, এটাই স্বাভাবিক। এক পর্যায়ে রাজকুমার সেলিমের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে বন্দেলারাজের অতর্কিত আক্রমণে গােয়ালিয়রের কাছে আবুল ফজল ১৬০২ সালে নিহত হন। তাঁর মৃত্যু সম্রাট আকবরকে গভীরভাবে মর্মাহত করেছিল।