১৯৭১ সালে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে কসবা একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করেছিলো। কসবায় যারা সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন অথবা পাকবাহিনীর বর্বরতা ও নির্মমতা নিকট থেকে প্রত্যক্ষ করেছিলেন অথবা তার শিকার হয়েছিলেন - এমন ব্যক্তিদের মুখের কথা বর্তমান গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যাঁরা সাক্ষাৎকার দিয়েছেন - তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সাধারণ কৃষক, শ্রমিক, দোকানদার, ছাত্র, শিক্ষক, পুলিশ, তৎকালীন ইপিআর, বেঙ্গল রেজিমেন্টের সদস্য, রাজনৈতিক নেতা কর্মীসহ সমাজের বিভিন্ন পেশার ও স্তরের মানুষ। এই সকল অংশগ্রহণকারী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের জন্য ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ছিলো তাঁদের জীবনের অবিস্মরণীয় ঘটনা। এঁদের বয়সের, শিক্ষার এবং পেশাগত অবস্থানের তারতম্য থাকায় একই ঘটনার বর্ণনার ক্ষেত্রেও কিছু ভিন্নতা লক্ষ্য করা যাবে। ১৯৭১ সালে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পরিস্থিতি ও সংগ্রামের চিত্র এক রকম ছিলো না। মুক্তিযুদ্ধের বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস রচনার জন্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সঠিক চিত্র উদঘাটন করা প্রয়োজন। বর্তমান গ্রন্থ থেকে কসবা অঞ্চলের একটি বস্তুনিষ্ঠ চিত্র পাওয়া যাবে বলে আমাদের ধারণা। এসব সাক্ষাৎকার বা বিবরণ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নয় - ইতিহাস রচনার উপকরণ মাত্র। এসব তথ্য-উপাত্ত ইতিহাস গবেষণা বা রচনার জন্য যেমন - তেমনি সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় যেমন - নাটক, উপন্যাস, গল্প, কবিতা রচনায়ও বিশেষ অবদান রাখতে পারে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের তথ্যসংগ্রহ, সংরক্ষণ, গবেষণা এবং স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের রাজনীতি, অর্থনীতি ও সমাজ-সংস্কৃতি বিষয়ে গবেষণার জন্য দেশের বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ, অর্থনীতিবিদ এবং সমাজসেবীদের নিয়ে ১৯৮৯ সালে গঠিত হয় ‘মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা ট্রাস্ট’। ট্রাস্টিগণ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস চর্চা, লালন ও বিকাশে ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ‘মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্র’। প্রতিষ্ঠার পর থেকে গবেষণা কেন্দ্র মুক্তিযুদ্ধের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ, সংরক্ষণ, গবেষণা, নিয়মিত সেমিনার-সিম্পোজিয়াম আয়োজন এবং গ্রন্থ প্রকাশ করে আসছে। কেন্দ্রটি ১৯৯৬ এবং ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শহর থেকে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত যাঁরা যুদ্ধে অংশগ্রহন করেছেন, যাঁরা নির্যাতিত হয়েছেন, যাঁরা সাহায্য-সহযোগিতা প্রদান করেছেন অথবা যাঁরা মুক্তিযুদ্ধ-কে প্রত্যক্ষ করেছেন, এমন মানুষের অভিজ্ঞতা বাণীবদ্ধ করার জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। এই প্রকল্পের আওতায় দু’বছরে প্রায় আড়াই হাজার মানুষের সাক্ষাৎকার রেকর্ডভুক্ত করা হয়েছে। এসব সাক্ষাৎকার গ্রন্থাকারে প্রকাশ করাও গবেষণা কেন্দ্রের অন্যতম দায়িত্ব।