গর্ভকাল, প্রসব বেদনা, প্রসব, বিশ্রামের ধারণা, চিকিৎসা ইত্যাদির অর্থ স্থির, কিংবা ধ্রুব কিছু নয়। শ্রেণী, প্রজন্ম কিংবা সমাজভেদে এ বিষয়গুলোর অর্থ ভিন্ন হয়ে যায়। ঢাকা শহরে করা এই গবেষণা কাজে গর্ভাবস্থাকে মধ্যবিত্ত ও শ্রমিক-এই দু’টি শ্রেণী এবং তরুণ ও বয়োজ্যেষ্ঠ-এই দুই প্রজন্মের ভিত্তিতে বোঝার চেষ্টা করা হয়েছে। একই সাথে এ কাজের বিবেচনায় ছিল নিরাপদ গর্ভকাল ও নবজাতকের জন্য চিকিৎসাবিজ্ঞান ও চিকিৎসকের ক্রমশ প্রশ্নাতীত হয়ে ওঠা এবং গর্ভকাল ও প্রসব সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোও। সামাজিক গবেষণার গুণগত পদ্ধতি ব্যবহার করে সম্পন্ন এই কাজে নিবিড় সাক্ষাৎকারের মধ্যে দিয়ে উঠে আসা ডিসকোর্সসমূহ বিশ্লেষণ গুরুত্বপূর্ণ জায়গা জুড়ে আছে। এই বইয়ে শ্রেণী এবং প্রজন্মভেদে নারী তাদের গর্ভকালের অভিজ্ঞতাকে নির্মাণ করতে যে সমস্ত ডিসকোর্স ব্যবহার করে, সেগুলো, সাথে চিকিৎসাবিজ্ঞান ও চিকিৎসকগণ গর্ভকাল ও প্রসব বুঝতে ব্যবহৃত ডিসকোর্স বিশ্লেষণ করা হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, মধ্যবিত্তের জন্য চিকিৎসকের কাছে যাওয়া জরুরি, কারণ তারা গর্ভকালকে রোগ হিসেবেই দেখে, যদিও আধুনিক চিকিৎসার ব্যাপারে তারা সমালোচনাহীন নয়; কিন্তু তাদের জন্য বিকল্প পাওয়া কঠিন। অপরদিকে শ্রমিকের জন্য জৈব চিকিৎসাবিজ্ঞানকে প্রত্যাখ্যান তুলনামূলকভাবে সহজ, বিশেষ করে প্রসবের সময়। এ কথা বলার অর্থ এই নয় যে, চিকিৎসাবিজ্ঞানের দাপট হতে শ্রমিক নারী মুক্ত। জৈব চিকিৎসাবিজ্ঞান নারীদের অভিজ্ঞতাকে উপেক্ষা করে এবং শরীরকেও নারীর সত্তা থেকে বিযুক্ত করে, সে কারণে এ কাজে জৈব চিকিৎসাবিজ্ঞানের ক্ষমতাকে বোঝার চেষ্টা করা হয়েছে, যে ক্ষমতার মাধ্যমে সে বৈধতা লাভ করে এবং বিদ্যমান অপরাপর জ্ঞানকে খারিজ করে, তাকে স্পষ্ট করার চেষ্টা করা হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে, চিকিৎসাবিজ্ঞান চর্চার সাথে কেবলমাত্র পরার্থবাদিতা কাজ করে না, এর সাথে বাণিজ্যিক লাভালাভেরও গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে।