উনিশ শতকের ঔপনিবেশিক বাংলায় মীর মশাররফ হোসেন প্রথম সার্থক বাঙালি মুসলমান গদ্যশিল্পী। তাঁর রচিত গ্রন্থাবলি তৎকালে ছিল সমাদৃত, এখনও ইতিহাসধারায় উল্লেখযোগ্য। বিখ্যাত বহুপঠিত বিষাদ-সিন্ধুর এই রচয়িতা জন্মেছিলেন জমিদার পরিবারে, চাকরিও করেছেন জমিদারের এস্টেটে। হিন্দু-মুসলমান ও তৎকালীন ইংরেজ শাসক, বিশেষ করে নীলকর ও আদালতের বিচারব্যবস্থার যথাযথ চিত্র পাওয়া যায় তাঁর প্রণীত গ্রন্থাবলিতে। শ্রেষ্ঠ মীর মশাররফ হোসেন দ্বিতীয় খণ্ডে গ্রন্থিত হয়েছে গাজী মিঞার বস্তানী, আমার জীবনী, বিবি কুলসুম ইত্যাকার রচনা। আত্মজীবনী রচনার চমৎকার নমুনা এই ত্রয়ীগ্রন্থ। আর তাতে বিধৃত হয়েছে তৎকালীন ঔপনিবেশিক সমাজকাঠামো, হিন্দু-মুসলমানের দ্বন্দ্ব-মিলন, সংস্কার-সংস্কৃতি ইত্যাদি। মশাররফের দৃষ্টিভঙ্গির উদারতার পরিচয় এসব গ্রন্থে পরিস্ফুটিত। রচনার ভাষা প্রাঞ্জল ও শক্তিশালী। বয়নরীতিতে স্বকীয়তা রয়েছে। পাঠক খণ্ডটি পাঠ করলেই তার পরিচয় পাবেন। গ্রন্থের শেষে লেখকের গ্রন্থ-পরিচিতি, জীবনপঞ্জি ও গ্রন্থপঞ্জির সংযোজন করায় এটি হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ। দ্বিতীয় খণ্ডটিও পাঠক সমাদৃত হবে বলে প্রতীত হয়। কারণ উভয় বঙ্গে মীর মশাররফের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসধারায়ও তাঁর অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ। উদারনৈতিক ভাবধারার এই শিল্পীর ধর্মীয় ভাবধারামূলক লেখা থাকলেও মোটামুটিভাবে তিনি বাস্তবধর্মী একজন সমাজসচেতন জীবনশিল্পী।