ফরাসি দার্শনিক, বৈজ্ঞানিক ও গণিতজ্ঞ রনে দেকার্তের (১৫৯৬-১৬৫০) জন্ম ফ্রান্সের এক ছোট শহরে। মধ্যযুগ ও রেনেসাঁসের সময় যখন দার্শনিক চিন্তা বিভ্রান্তির পাঁকে পড়ে আর অগ্রসর হতে পারছিল না, তিনিই যুক্তিবাদের প্রবর্তন করে দর্শনকে সেই পঙ্কিল নিয়তি থেকে মুক্তি দিলেন, বিজ্ঞানকে দর্শনের সঙ্গে যুক্ত করে উভয়েরই উন্নতির পথ প্রশস্ত করলেন। লিখলেন লাতিনে নয়, ফরাসিতে : Discours de la Methode (দিকু দ্য লা মেতদ্)। এমন জ্ঞান-বিজ্ঞানমূলক গ্রন্থ এই প্রথম ফরাসিতে রচিত হওয়ার সুযোগ পেল-তার আগে পর্যন্ত এই শ্রেণীর গ্রন্থ-প্রণয়নে একমাত্র লাতিন ভাষার ব্যবহারই প্রচলিত ছিল। ফরাসিতে লেখার কারণ-তিনি পাঠক হিসেবে পেতে চেয়েছিলেন শুধুমাত্র পণ্ডিতদেরই নয়, সাধারণ বুদ্ধিসুদ্ধিসম্পন্ন যে-কোনো লোককেই, নারীদের পর্যন্ত। যদিও ফরাসিতে লিখিত, বইটি প্রকাশিত হয়েছিল হল্যান্ড থেকে এবং তাতে লেখকের নামও উল্লিখিত হয়নি। অথচ সঙ্গে সঙ্গেই, যদিও অলেক্ষ্য, ফরাসি ভাষা ও গদ্য-সাহিত্যে একটি যুগান্তর সাধিত হল। সুমধুর ও প্রাঞ্জল ভাষায় লিখিত “পদ্ধতি বিষয়ক আলোচনা” গ্রন্থটি আজো ফরাসি সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্পদ বলে পরিগণিত হয়। অকালপ্রয়াত কবি, পণ্ডিত, ফরাসি ভাষায় পারঙ্গম লোকনাথ ভট্টাচার্য (১৯২৭-২০০১) এ গ্রন্থ অনুবাদ করে বাংলার বিদ্বৎসমাজের যে স্থায়ী উপকার সাধন করেছেন, তার জন্য বাঙালি চিরকাল তাঁকে মনে রাখবে।