Authors:
জায়েদ ফরিদ
জায়েদ ফরিদের জন্ম ১৯৪৮ সালে। শৈশব-কৈশোর কেটেছে এক বিমিশ্র প্রাকৃতিক ঠিকানায় যার সামনে পদ্মা, পেছনে যমুনা, মাঝখানে কাশবন, বিস্তীর্ণ ধানক্ষেত এবং বন-জঙ্গল। গাঙ্গেয় শুশুকের সঙ্গে সাঁতার কেটে আর বন-বাদাড়ে ঘুরে বেড়িয়ে বড় হয়েছেন তিনি। শৈশবের দুরন্ত জায়েদের প্রথমপাঠ পাবনায় শুরু হলেও পরবর্তীকালে পিতার চাকরিসূত্রে আরণ্যক যশোরে অবস্থান করেছেন প্রায় একযুগ। অতি-কৈশোরেও তৎকালীন যশোরের উদ্ভিদজগৎ, সাধুসন্তদের চিন্তাধারা ও লালনগীতি তাঁর জীবনবোধকে স্পর্শ করে। পরবর্তীকালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগে অধ্যয়ন করেছেন তিনি। পেশাগত জীবনে মধ্যপ্রাচ্যে রিয়াদের বিজ্ঞান জাদুঘরে প্রকৌশল ও টেকনিক্যাল কিউরেটর হিসেবে কাজ করেছেন প্রায় দু-দশককাল।
বিদেশের মাটিতে থেকেও তিনি দেশের প্রকৃতিকে গভীরভাবে অন্তরে ধারণ করে আছেন। ছুটিতে দেশে এসেই নিসর্গীদের নিয়ে অক্লান্তভাবে ঘুরে বেড়ান বৃক্ষজগতের অলিগলিতে। বিদেশের খণ্ড-অবসরে তিনি রাইটার্স নামে একটি সাহিত্যপত্রিকা সম্পাদনা করেছেন কয়েক বছর, বিজ্ঞান চর্চা করেছেন, গল্প-কবিতা লিখেছেন। এ যাবৎ সংকলনসহ প্রকাশিত হয়েছে তাঁর ১৪টি গ্রন্থ। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহের মধ্যে জল পাতা যুবতী (ছোট গল্প), দেয়ালের বর্ণমালা (ছোট গল্প), The Third Sky (ইংরেজি কবিতা), ঋকরাত্রি (কবিতা), ত্রিপর্ণ (তিন লাইনের কবিতা), নির্বাচিত কবিতা অন্যতম।
প্রচারবিমুখ, বন্ধুবৎসল এই মানুষটির অনেক অদ্ভুত স্বভাব সম্পর্কে জানা যায়। দীর্ঘ যানজটেও কখনো ক্লান্ত হন না, চোখ তখন নিবিষ্ট থাকে রাস্তার পাশে বা সড়কদ্বীপের গাছগুলোর দিকে। প্রকাশনার পর কখনো নিজের বইয়ের খবর রাখেন না, মনে করেন পুস্তকের যাবতীয় অধিকার পাঠকের। খেয়ালি এই নিসর্গীর আরেকটি স্বভাব হলো উদ্ভিদসংক্রান্ত বিচিত্র তথ্য-সংগ্রহ করে তা অন্যদের অবহিত করা। জীবন, সাহিত্য, বিজ্ঞান ও উদ্ভিদের মেলবন্ধনে জায়েদ ফরিদের অবদান অনস্বীকার্য। এই সদালাপী, নিরহংকার মানুষটির পথচলা সরল ও নিরবচ্ছিন্ন হোক, আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
-সাহানা চৌধুরী মমি, ঢাকা