পারস্যের ফলবাগিচার বুলবুল হাফিজ। এ মহান কবি পারস্যের মুসলিম রেনেসাঁর সময় সমুদ্র উত্থিত এক অমূল্য রতœ। ব্রাউনের মতে, হোমার কালিদাস শেক্সপিয়ার গ্যাটের পরেই তাঁর স্থান। গ্যাটে পর্যন্ত ছিলেন তাঁর সৃষ্টিতে মগ্ধ। কিন্তু হাফিজ যে প্রবল প্রতিবন্ধকতা উতরে সুকৃতি অর্জন করে অসাধারণ জনপ্রিয়তা ও অসামান্য প্রতিভার দ্যুতিতে আরবসহ তামাম জগৎ আলোকিত করেছিলেন তা আজও বিস্ময়ের উদ্রেক না করে পারে না। এ এক বিস্ময়কর প্রতিভা যাঁর কবিতার স্পর্শে এসে বিশ্বত্রাস তৈমর লঙ্গ পর্যন্ত তাঁর নিধনযজ্ঞ থেকে নিবৃত হয়েছিলেন। গ্রন্থ-লেখকের মতে রোমান্টিসজমের জন্ম নাকি পাশ্চাত্য নয় বরং পারস্যে এবং তা হাফিজের হাতে। এ কবিতা-গোলাপ শিল্পের স্রষ্টা হাফিজ এবং দিওয়ানের ছত্রে ছত্রে তা ঠাঁসা, যাতে দুনিয়ার তাবৎ প্রেমিকচিত্ত বরাবর ঝলসে যায়। তাঁর মিস্টিক ভাবানুভূতির গমকে আজও দেশ-বিদেশে মানুষ আকুল। বাংলাদেশে হাফিজের কবিতা ত্রয়োদশ শতক থেকে সমাদৃত। স্বয়ং চৈতনদেব কিংবা চণ্ডীদাস হাফিজের কবিতা আস্বাদন করতে এমন দুর্লভ তথ্য পর্যন্ত মেলে। যতদূর সম্ভব জানা যায় হাফিজের কবিতা বাংলায় অনুবাদ হলেও ব্যক্তি-হাফিজ সম্পর্কে তেমন কিছু গ্রন্থবদ্ধ হয় নি। দীর্ঘ দশ বছর পরিশ্রম করে শামসুল আলম সাইদ নিজ সাধ্যমতো হাফিজের দিওয়ানা অনুবাদসহ এ গ্রন্থ রচনা করেছেন। হাফিজ-জীবনীভিত্তিক এ গ্রন্থটি সমাদৃত হলে লেখকের প্রচেষ্টা সফলতার মুখ দেখবে বলে আমাদের বিশ্বাস।