বিগত সাতবছর ধরে শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার এক-একটি অধ্যায়কে উৎসমুখ ধরে বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় যে কবিতাগুলি রচনা করে চলেছেন, আবহমান বাংলা কবিতার জগতে তা এক অনন্য সংযোজন।
‘বিভূতি-যোগ’-কে উৎসে রেখে ‘দশচক্র’ কিংবা ‘বিশ্বরূপদর্শন-যোগ’-কে উৎসে রেখে ‘বিশ্বরূপদর্শন’-এর মতো, এই কাব্যগ্রন্থের আঠেরোটি কবিতাই প্রকাশ পাওয়ামাত্র আলোড়ন তুলেছিল পাঠক সমাজে। কবিতার পর কবিতায় কবি, কৃষ্ণার্জুনের সঙ্গে
ভাত-নুন’কে, ভগবানের সঙ্গে ছিনাথ বহুরূপীকে মিলিয়ে দিয়েছেন অনায়াসে, ভারতাত্মায় ছুঁইয়ে এসেছেন ব্যক্তিগত অশ্রু। বিনায়কের দীর্ঘদিনের পাঠকও এই কাব্যগ্রন্থে আবিষ্কার করবেন নতুন এক স্বর, যা ঈশ্বরকে দিয়েও বলিয়ে নেয়, ‘ভগবানের পৃথিবীতে আর কোনওদিন কিচ্ছু পালটাবে না/ একটা শেষ চেষ্টা করে দ্যাখো…/ মানুষের পৃথিবীতে কিছু পালটায় কি না’।
তবু, সব পালটে যাবার পরও ধ্রুবতারা ধ্রুবই থাকে। ‘সম্ভবামি’ পাঠককে নিয়ে যায় সেই অমোঘ জিজ্ঞাসার কাছে, ‘কুরুক্ষেত্র থেকে কলকাতা/ মানুষের সঙ্গে মানুষের শত্রুতা মৃত্যুতেই ফুরিয়ে যায়/ ভালবাসা ফুরোয় না কেন?’