১৯৭১ সালের ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র লড়াইয়ের মাধ্যমে আমরা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতষ্ঠা করি। ৯ মাসের সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা হলেও এ স্বাধীনতার জন্য বাংলার মানুষকে আন্দোলন-সংগ্রামের করতে হয়েছে যুগের পর যুগ। প্রায় দুইশত বছর আন্দোলন-সংগ্রামের পর ১৯৪৭ সালে ইংরেজ শাসনের অবসান হয়। কিন্তু তাতে বাংলার মানুষের ভাগ্যের কোনাে পরিবর্তন হয়নি। কারণ পশ্চিম পাকিস্তানি রাজনৈতিক নেতাদের ষড়যন্ত্রের ফলে বাংলার মানুষ এক বিদেশী শাসকের পরিবর্তে আরেক বিদেশী শাসকদের দুঃশাসনের কবলে পড়ে। যার জন্য পাকিস্তানি দুঃশাসনের বিরুদ্ধে আবার শুরু হয় বাংলা মানুষের আন্দোলন সংগ্রাম। আর এ আন্দোলন সংগ্রামের মূল চালিকা শক্তি ছিল আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর নেতৃত্বেই আন্দোলন সংগ্রামের চরম পরিণতি ১৯৭১ সালের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ। আর এই রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র যুদ্ধের সােনালী ফসল স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।
-বাংলার মানুষের মরণজয়ী সশস্ত্র লড়াইয়ে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র ছিল মনতাত্ত্বিক যুদ্ধ (Psychological Warfare)-এর প্রধান অস্ত্র। সশস্ত্র লড়াইয়ের বিভিন্ন রণাঙ্গনে বাঙ্কারে বাঙ্কারে কিংবা যেকোনাে যুদ্ধক্ষেত্রে কী অগ্রগতি ও সফলতা অর্জিত হচ্ছে, তা সকলকে অবগত করে পারস্পরিক যােগসূত্রের দৃঢ়বন্ধনকে অটুট রাখা এবং বিশ্বের তাবৎ মানুষকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই, কী করে লড়ছে সাধারণ মানুষ ওই দুর্ধর্ষ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অন্ধ ভাড়াটিয়া সদসাগুলাের বিরুদ্ধে মুক্তিফৌজ গঠন করে দেশবাসী সাধারণ মানুষের অভাবিতপূর্ণ বিপুল ঐক্যের এই প্রতিরােধ যে শাসন নয় কেবল শােষণের বিরুদ্ধে দমন-পপীড়ন সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের অধিকার হরণের বিরুদ্ধে, সেটাই জানাত মুক্তিসেনা দল নিজেদের জীবনযুদ্ধে। দুনিয়াব্যাপী মুক্তিসংগ্রাম যেখানেই সংঘটিত হয়েছে, তারই পেছনে ছিল বপ্লবী-বিদ্রোহী বেতার, যা কিনা মানুষকে সদা-সর্বদা সজাগ রাখত শত্রুর বরুদ্ধে, সংগঠিত করত জনযুদ্ধে এবং আক্রান্ত জনগােষ্ঠীর মনােবল চাঙ্গা রাখার কাজ করেছে এই বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র।