আপনি বঙ্গভাষার লেখক। কিন্তু যে বাংলা আপনি লেখেন, তা কি পুরোপুরি নির্ভুল? কোথায় ‘অনুপস্থিতিতে’ লিখতে হবে আর কোথায় ‘অবর্তমানে’, তা কি আপনি জানেন? কিংবা কোথায় ‘উদ্দেশে’ আর কোথায় ‘উদ্দেশ্যে’? না জানলেও ভাবনার কিছু নেই। কেননা, শব্দপ্রয়োগের ব্যাপারে কোনও সমস্যা দেখা দিলে আনন্দবাজার পত্রিকার সম্পাদকীয় বিভাগের কর্মীরা যার উপরে একবার চোখ বুলিয়ে নেন, সেই ব্যবহার-বিধির সাহায্য এবারে আপনিও পাচ্ছেন। এ বই শুধু সাংবাদিকদের জন্য নয়, বাংলা ভাষায় যাঁরা লেখালিখি করেন, তাঁদের সবার জন্য। আদ্যন্ত ঝরঝরে সরস বাংলায় লেখা। যাতে পড়বামাত্র বোঝা যায় যে, কী লিখতে বলা হচ্ছে ও কেন লিখতে বলা হচ্ছে। এ বইয়ে তুলে ধরা হয়েছে এমন সব ভুলত্রুটির দৃষ্টান্ত, যা আমরা আকছার ঘটতে দেখি, অথচ যৎসামান্য সতর্ক ও যত্নশীল হলেই যা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব। এখানে আছে ভাষা ব্যবহার, বাক্য গঠন ও শব্দ নির্বাচন সম্পর্কে নানা জরুরি পরামর্শ। আছে তর্জমা, প্রতিবেদন, অনুচ্ছেদ বিভাজন, কপি লেখা, সংবাদ বাছাই করা ও শিরোনাম রচনার আদর্শ রীতি নিয়ে প্রয়োজনীয় পথনির্দেশও। আছে কালনির্ণয়, বর্ষপঞ্জি, বিভিন্ন মুদ্রাব্যবস্থা, পরিমাপ, সংখ্যার সমস্যা, প্রতিবর্ণীকরণ, প্রুফ সংশোধন, হরফের আকার ও বৈচিত্র্য, স্থান-নাম ও ব্যক্তি-নাম ইত্যাদি নানা বিষয়ের আলোচনা। আর আছে আনন্দবাজার পত্রিকার প্রস্তাবিত বানান-বিধি, ইতিমধ্যেই যা গুণিজনদের অনুমোদন ও সমর্থন পেয়েছে। উপরন্তু সমস্ত তথ্যই এখানে বর্ণানুক্রমিকভাবে সাজিয়ে দেওয়া হয়েছে, যাতে খুব সহজেই আপনার তাবৎ প্রশ্নের উত্তর আপনি পেয়ে যান। ‘কী লিখবেন, কেন লিখবেন’ একেবারে অন্য ধরনের কোষগ্রন্থ। এমন বই বাংলা ভাষায় এর আগে আর বার হয়নি। নির্ভুল বাংলা যাঁরা লিখতে চান, এ বই তাঁদের সর্বক্ষণের সঙ্গী হবার যোগ্য। সংবাদ পরিবেশনার ক্ষেত্রে আনন্দবাজার পত্রিকার মস্ত গুণ তার নির্ভরযোগ্যতা। তার জনপ্রিয়তার মূলে রয়েছে নির্ভুল সংবাদ, নিরপেক্ষ বিশ্লেষণ এবং—যার মূল্য কিছুমাত্র কম নয়—স্বচ্ছ সাবলীল বাংলা। উপরন্তু, অর্ধ শতাব্দীরও অধিক কাল ধরে বাংলা সাহিত্যের সঙ্গে এই পত্রিকা নিবিড় যোগসম্পর্ক রক্ষা করে চলেছে। রচনা, সম্পাদনা ও প্রকাশনার ব্যাপারে আনন্দবাজার পত্রিকা যে-সব ব্যবহার-বিধি মান্য করবার পক্ষপাতী, তা এই প্রথম একত্র করা হল। এবং সর্বজনের সুবিধার্থে একসূত্রে গেঁথে প্রকাশ করা হল গ্রন্থাকারে।