ব্রিটিশ বাংলার ইতিহাসে ১৯০৫-৪৭ সময়কাল বেশ ঘটনাবহুল ও গুরুত্বপূর্ণ। ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ এবং বঙ্গভঙ্গকে কেন্দ্র করে হিন্দু ভদ্রলােক শ্রেণী ও কংগ্রেসের আন্দোলন-সংগ্রাম বাংলার হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্পর্ক নষ্ট করে, সৃষ্টি হয় অবিশ্বাস ও তিক্ততার। ১৯০৬ সালে নিখিল ভারত মুসলিম লীগ নামক রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠার পর বাংলা তথা ভারতে হিন্দু ও মুসলমানের ভিন্ন ধারার রাজনীতি শুরু হয়। ১৯১৬ সালের লক্ষ্ণৌ চুক্তি স্বাক্ষর, ১৯১৯-২৪ সালের খিলাফত আন্দোলন, ১৯২০-২২ সালের অসহযােগ আন্দোলন এবং ১৯২৩ সালের বেঙ্গল প্যাক্টের মাধ্যমে হিন্দু-মুসলমানের সম্পর্কের উন্নয়নের চেষ্টা করা হলেও ১৯২৫ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের মধ্যে লাগাতারভাবে বৈরী সম্পর্ক বিদ্যমান থাকে। হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারতে সংখ্যালঘু মুসলমান সম্প্রদায়ের কোনরূপ স্বার্থরক্ষা করা সম্ভব হবে না- এ সত্যটি উপলব্ধি করেই মুসলিম লীগ ১৯৪০ সালে ঐতিহাসিক লাহাের প্রস্তাবের মাধ্যমে ভারতের মুসলমানদের জন্য আলাদা আবাসভূমির দাবী উত্থাপন করে। পক্ষান্তরে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের ব্রিটিশবিরােধী সকল আন্দোলন সংগ্রামের লক্ষ্য ছিল এক অখণ্ড ভারত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ ক্রিপস মিশন ও কেবিনেট মিশন-এর মাধ্যমে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের মধ্যে আপােষ রফার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় এবং অবশেষে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট ভারতবর্ষ বিভক্ত হয়ে ভারত ও পাকিস্তান নামক দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়। সেই সঙ্গে বাংলাভাষাভাষি ভূখণ্ডটিকেও বিভক্ত করে বাঙালি জাতিকে দুটি আলাদা রাষ্ট্রে বিভক্ত করা হয়। এই গ্রন্থে ১৯০৫-৪৭ সময়কালের এসব ঘটনাপঞ্জি আলােচনা করা হয়েছে।