শিল্পমনের সঙ্গে সমাজবিজ্ঞানীর সচেতনতা, ঔপন্যাসিকের মানব-পর্যবেক্ষণ দক্ষতার সঙ্গে অর্থনীতিবিদের নির্মোহ বিশ্লেষণÑ এমনি ভিন্ন মেরুর বোধ একত্রে ধারণ করে বৃটেনে প্রবাসকালের অন্তরঙ্গ ও শিল্পমনস্ক ছবি এঁকেছেন কথাসাহিত্যিক হাসনাত আবদুল হাই। বাংলা সাহিত্যে ব্যক্তিগত নিবন্ধাবলীর ক্ষীণতোয়া ধারায় একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন ঘটলো জার্নাল ’৮৯-এর সুবাদে। নীরদ চৌধুরী, উইলিয়াম রাদিচি, কেতকী কুশারী ডাইসন প্রমুখ ব্যক্তিত্বের প্রতিকৃতি, চিত্রকলা চলচ্চিত্র নাটক ফটোগ্রাফীসহ বিভিন্ন শিল্পধারার আলোচনা, সাহিত্য ও গ্রন্থজগতের হালফিল খবর এবং সমাজ ও রাজনীতির বিভিন্ন দিকে আলোকসম্পাত করেছেন তিনি অন্তরঙ্গ ঘরোয়া ভঙ্গীতে। স্বাদু ও ঋজু গদ্যে রচিত দুই সংস্কৃতির পরিচয়বহ জর্নাল ’৮৯ আমাদের সাহিত্যে একটি ব্যতিক্রমী গ্রন্থ হিসেবে বিশেষ মর্যাদার দাবীদার। পাঠকমাত্রই জানেন হাসনাত আবদুল হাই-এর ভ্রমণকাহিনি যেন ছবির এলবাম। বিচিত্র সব দৃশ্য আর নানা মানুষের এক বিশাল ক্যালাইডোস্কোপ। পড়তে পড়তে অতীত ফিরে আসে বর্তমানে, মানুষেরা কথা বলে সজীব হয়ে। শব্দ-বর্ণ-দৃশ্য-গন্ধের যে সমাহার অক্ষরের শৃঙ্খলে বরফ-জমাট তারা মুক্তি পেয়ে চঞ্চল করে দেয় পঞ্চেন্দ্রিয়। যারা লেখকের মতো সৌভাগ্যবান হয়ে দেশ-দেশান্তরে ভ্রমণের সুযোগ পান নি তাদেরকে লেখকের ভ্রমণ-সঙ্গী করার উদ্দেশ্য নিয়েই তিনি এসব ভ্রমণকাহিনি লিখেছেন। লেখকের অভিজ্ঞতার কিছুটা পাঠককে দিতে চেয়েছেন তিনি। ভেবেছেন আরাম-কেদারায় বসেই পাঠক পেরিয়ে যাক না সাত সমুদ্দুর তেরো নদী। এভাবে হাসনাত আবদুল হাই-এর ভ্রমণ হয়ে উঠতে পারে অনেকের অভিজ্ঞতা।