পরম শাক্ত, ব্রাহ্মণ পরিবারের সন্তান জগন্নাথ। শাস্ত্রপাঠ, যাগযজ্ঞ পূজা-অর্চনা, প্রচলিত জীবনচর্যার মধ্যে সে খুঁজে পায়নি লক্ষ্যপথ। শ্রীচৈতন্যকে দর্শন করেই জগন্নাথ প্রথম উপলব্ধি করল প্রেম আর কল্যাণের মধ্যেই জীবনের সার্থকতা। কিন্তু শ্রীচৈতন্যের যে-সুমহান মানব প্রেমের আদর্শ একদিন অবক্ষয়ী বাংলার জনমানসে জোয়ার তুলেছিল, তিনি বাংলা পরিত্যাগ করবার কয়েক বছরের মধ্যেই তাতে নেমে এল ভাঁটার টান। শুধুই কি শ্রীচৈতন্য- যুগে যুগে যখনই কোনও মহাপুরুষের আবির্ভাব ঘটেছে, তার প্রজ্বলিত আলোক শিখায় মানুষ উজ্জীবিত হয়ে উঠেছে, ভুলে গিয়েছে সব ভেদাভেদ। কিন্তু যেদিন থেকে ইতিহাসের পাতায় স্থান হয়েছে মহামানবের, তখন থেকে তাঁর আদর্শের ধ্বজাকে সামনে রেখে স্বার্থসিদ্ধির উগ্রকামনায় মেতে উঠেছে তাঁর অনুগামীরা। আলো মুছে গিয়ে আবার নেমে এসেছে অন্ধকার। যুগে যুগে সেই অন্ধকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের প্রতীক জগন্নাথ। ভগীরথের মতো যারা একাই বয়ে নিয়ে গিয়েছে আলোর রেখা।জগন্নাথের চরিত্রে নিহিত আছে সেইসব পরিচয়হীন অখ্যাত মানুষের জীবনকথা, যারা আজও সমাজের অবক্ষয়, অন্ধকার, প্রেমহীনতার মধ্যে নিজেদের আদর্শ থেকে বিচ্যুত হন না। তাই জগন্নাথ কোনও ধর্মের, সম্প্রদায়ের বা যুগের প্রতিনিধি নয়— সে চিরন্তন শাশ্বত মানবাত্মার প্রতীক। চিরন্তন মানবধর্মের দ্যোতক।