আবহমান বাংলা সাহিত্যের প্রধান কবিদের অন্যতম হচ্ছেন কবি কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯-১৯৭৬)। তাঁর বহুমাত্রিক সহজাত প্রতিভার বিচ্ছুরণে ঋদ্ধ, আলােকিত হয়েছে বাংলা সাহিত্য ও সংগীত জগতের বিভিন্ন ক্ষেত্র। কী ছিলেন না তিনি? একাধারে কবি, গল্পকার, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, শিশুসাহিত্যিক, গীতালেখ্য-গীতিনাট্য রচয়িতা, সুরকার, স্বরলিপিকার, গায়ক, বাদক, অভিনেতা, সাংবাদিক, সম্পাদক, পত্রিকা পরিচালক, চলচ্চিত্রের কাহিনীকার, শ্রমিক, রাজনীতিক, অধ্যাত্ম সাধক। কত না। বিচিত্র তাঁর কর্মভুবন। আঁরইগানের ভাষায় বলা চলে, পাষাণের ভাঙালে ঘুম কে তুমি সােনার ছোঁয়ায়...। এত যে বিস্তৃত ব্যাপ্ত সুবিশাল কর্মপরিধি, তার মধ্যে তার। বিহার-বিচরণ বড়ােই স্বাচ্ছন্দ্যে সাবলীল এবং অনায়াস। বিদ্রোহী কবি হিসেবেই তিনি বিশেষ পরিচিত। ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতা তিনি দাবি করেছিলেন। সেই কালের প্রেক্ষাপটে তা ছিল রীতিমত দুঃসাহসিক। মুক্তচিন্তা ও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় পুষ্ট তার লেখক ও ব্যক্তিসত্তা। আগুনঝরা কবিতা লেখার জন্যে সশ্রম কারাদণ্ডে তাঁকে দণ্ডিত করেছিল ঔপনিবেশিক স্বৈরাচারী ব্রিটিশ সরকার। নজরুলের তুলনা নজরুলই। তিনি বাংলাদেশের জাতীয় কবি। এই গ্রন্থে বিধৃত হয়েছে নজরুল প্রতিভা ও মানসের নানা দিকের খুঁটিনাটি ও পর্যবেক্ষণ। তাঁর সমকালীন সুহৃদ স্বজন, শুভাকাঙ্ক্ষী এবং উত্তরকালের লেখকদের নির্মোহ, সত্যনিষ্ঠ, আন্তরিক নিরিখে যথাসম্ভব বিশ্লেষিত মূল্যায়িত হয়েছে হিমালয়প্রতিম নজরুল প্রতিভার স্বরূপ।