গাইবান্ধা থেকে মেলবোর্ন, কপোতাক্ষবিধৌত যশোরের সাহিত্য আসর থেকে জার্মান বেতার তরঙ্গ ডয়েচে ভেলে, পবিত্র মক্কা-মদিনা, মাটির দেশ বিলেত। সবখানেই তার সানন্দ যাতায়াত, জনসমাদর, লোকায়তিক ভঙ্গি ও শৈলীতে স্বাদু গদ্যে পরিবেশনা- এ-ই হলেন কবি আসাদ চৌধুরী। একমেবাদ্বিতীয়ম। চারণকবিই শুধু নন তিনি, বিশ্ব ভ্রামণিকও বটে। এই বিশ্বনাগরিকের নিবিড়সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণ, অভিজ্ঞতায় জারিত প্রবন্ধমালায় রয়েছে সহজ স্বচ্ছন্দ নির্ভার ও অনুপম গদ্যের সৃষ্টিসৌন্দর্য।
কুশলী বয়ানে তিনি সৃজন করেন মনরাঙানিয়া সমাজচিত্র- যা আমাদের আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক এমনকি রাজনৈতিক ইতিহাসেরও ঋদ্ধ, স্নিগ্ধ ঐতিহ্যগর্বী উপাদান। রাজনৈতিক শব্দবন্ধ ব্যবহার করলাম এ কারণে যে, মুক্তিযুদ্ধকালীন শরণার্থী জীবন, স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশগ্রহণ, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে সক্রিয় সংগ্রাম- সব তিনি তুলে এনেছেন। এ যেন সাগরসেচা মানিক, অনবদ্য হৃদয়গ্রাহী শিল্পবুনন। তাঁর গদ্যসমগ্রের প্রথম খণ্ডের ছত্রে ছত্রে আমরা পাই সরস বয়ান, বিশ্বস্ত ও উপভোগ্য সংস্কৃতিচিত্র।
সুবিদিত যে, কবি আসাদ চৌধুরী অসামান্য কথক। তাঁর গদ্যে সেই মর্মছোঁয়া টিপছাপ, জাজ্বল্যমান উপস্থিতি মৃদুমেদুর সৌরভ ছড়ায়, আমোদিত করে মনস্ক পাঠক সমাজকে। তাঁর কল্পনাবিশ্ব ঔদার্যে স্নাত, সে কারণেই আমরা উর্দু সাহিত্যের, সাহিত্যব্যক্তিত্বের বিশদ অন্তরঙ্গ বর্ণনা পাই, যা রুচিশীল পাঠককে আবিষ্ট, বিস্তিত ও শিহরিত করে। এই ব্যতিক্রমী প্রাবন্ধিকের সাহিত্যরুচি উচ্ছ্বাসবর্জিত, নির্মোহ সত্যকথনে দৃঢ়। তাঁর পরিমিতিবোধ ও সংযম সমীহ দাবি করে।
কণ্ঠ তাঁর মৃদু, কিন্তু দুর্বল কিংবা নমিত নয়। কবি আসাদ চৌধুরীর প্রবন্ধ সমকালীন বাংলাসাহিত্যে অনন্য এক প্রাপ্তি, যে সম্পদ লোকজ মাধুর্যে ও ঐশ্বর্যে মণ্ডিত।