সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের যাবতীয় কাব্যগ্রন্থ কালানুক্রমিক রূপে বিন্যস্ত করে প্রকাশিত হচ্ছে ‘কবিতাসমগ্র’র এক একটি খণ্ড। বাংলা কবিতার যাঁরা প্রেমিক পাঠক, তাঁদের কাছে এ এক মস্ত খবর সন্দেহ নেই। কেননা, বাংলা কথাসাহিত্যের অন্যতম সেরা রচয়িতা যিনি, তিনি বাংলা কবিতারও এক অতি শক্তিমান স্রষ্টা, তা কে না জানেন। এই কথাটাও সবাই জানেন যে, পঞ্চাশের দশকে ‘কৃত্তিবাস’ নামক যে-আন্দোলন একদিন বাংলা কবিতার মোড় একেবারে অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছিল, সুনীলই ছিলেন তার নেতৃস্থানীয় কবি। পাঠক, সমালোচক—সবাই সবিস্ময়ে লক্ষ করেছিলেন যে, এই কবি কোনও পুরনো কথা শোনাচ্ছেন না; তিনি যা কিছু লিখছেন, তারই ভিতর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে এক ঝলক টাটকা বাতাস, আর সেই বাতাস ছড়িয়ে দিচ্ছে এমন এক সৌরভ, যা তার আগে পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। কথাসাহিত্য ও কবিতার দাবি একই সঙ্গে মেটানোর কাজটা বড় শক্ত। এ কাজ সবাই করতে পারেন না। সুনীল যে পেরেছেন, তার কারণ বোঝা কঠিন নয়। সবদিক থেকে একজন সফল সাহিত্যিক হয়েও এই সরল সত্য তিনি কখনও বিস্মৃত হননি যে, মূলত তিনি কবিই, এবং গদ্য নয়, কবিতাই তাঁর প্রথম প্রেম। সেই প্রেমের দাবি আজও তিনি মিটিয়ে যাচ্ছেন অকাতরে, পাঠকের আগ্রহকে সমানভাবে সঞ্জীবিত রেখে। তাঁর ‘কবিতাসমগ্র’-র এই তৃতীয় খণ্ডে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ছ’টি কাব্যগ্রন্থ : স্মৃতির শহর; সাদা পৃষ্ঠা, তোমার সঙ্গে; বাতাসে কিসের ডাক, শোনো; নীরা, হারিয়ে যেও না; সুন্দরের মন খারাপ, মাধুর্যের জ্বর; এবং রাত্রির রঁদেভু। এই সব কাব্যগ্রন্থের বহু কবিতা নানা বয়সী পাঠক-পাঠিকার স্মৃতিসম্পদ। বহু প্রবাদপ্রতিম পঙ্ক্তি আজও সকলের মুখে মুখে ফেরে। তাঁর সাম্প্রতিকতম কাব্যগ্রন্থ ‘সেই মুহূর্তে নীরা’ এই সংকলনে নেই। কবিতা সংগ্রহের চতুর্থ খণ্ডে সেই নীরার সঙ্গে চকিতে দেখা হবে।